বাদলও দিনেরও প্রথমও কদমও ফুল
মো: শাহ জালাল
রাত্রি গভীর, শুন সান নিরবতা ভেঙে একসুরে গেয়ে চলেছে মেঘলা আকাশ।
প্রকৃতির কান্নার শব্দে আচমকাই তমার ঘুম ভেঙে যায়।
পলক ফেলতেই চোখে পড়ে আঁধার আর আঁধার,
সিক্ত জোনাকি জানালার পর্দা ভেদ করে আশ্রয়ের আশায় উঁকি মারে আঁধারে নিমজ্জিত ছোট্ট ঘরটায়।
মনের অজান্তেই হৃদয়ের গহীন থেকে ভেসে আসে সুর
বাদলও দিনেরও প্রথমও কদমও ফুল।
কত মায়া মমতা আর আবেগ মাখা সে সুর খানি
মন আজ বরই উচাটন, বৃষ্টির এক একটা ফোঁটা টিনের চালায় যেই আছড়ে পড়ে, সেকালেই মনদরীয়ায় স্মৃতির নৌকা বাইতে শুরু করে।
পুরানো গল্প বারে বারে তমাকে নিয়ে যায় অতীতের স্মৃতিময় বাগানটিতে, যে পুষ্প কুঠিরে কদম হয়ে ফুটে ছিল সে৷
তরুণ নামের তরুনটি তমার জন্যে এক গুচ্ছ কদম হাতে প্রায় দাঁড়িয়ে থাকতো কলেজের মৃত প্রায় নাম ফটকের মুল প্রান্তে।
একদিন বেলা দ্বিপ্রহরে তমা লাজুকতার মাথা খেয়ে প্রশ্ন বানে একাধারে বিদ্ধ করতে থাকে তরুন কে, কেন তাঁর এ নিরবচ্ছিন্ন নীরবতায় আচ্ছন্ন দাঁড়িয়ে থাকা।? নীরবতায় সে কী বার্তা দিতে চায় তমাকে পুষ্প ভরা এহেন অবস্থানের মাধ্যমে। তরুন সে তো ভাষাহীন মৃতব্যক্তির মত অচেতন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যেন জড় পদার্থ। তবে তাঁর কদমপুষ্পা আত্মার অস্তিত্বের জানান পাওয়া যায় তমার প্রস্থান পথের পানে তরুনের অপলক দৃষ্টি নিক্ষেপন থেকে। বাড়ি ফিরে তমা বার বার ভাবতে থাকে তরুন নামের লাজুক তরুনটির কথা। কী হতে পারে তরুনের অপলক চাহনির। এটা কি প্রেম নাকি নিছক মোহ? নাকি ক্ষনিকের উন্মাদনা? ভাবনার প্রতিফলন এতটাই বেগতিক যে রাত্রিবসান নির্ঘুম নেত্রপাঁপড়ীতে। অতঃপর অনেক দিবসও রাত্রির অবসান ঘটে তরুনকে আর দেখা যায় না কলেজ গেটে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে। বোকা চাহনিতে মাদকতাও লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু তমার ভাবনার আঁচড় যেন শেষ হবার নয়। বর্ষায় তীব্র বারিধারা আজ এ রজনী কে বড়ই মধুর করে তুলছে তমার কাছে, যেন কদমের সুবাসিত হাওয়ায় তরুনের অস্তিত্ব বারে বারে স্থান করে নিচ্ছে তমার ক্ষুদ্র হৃদয় মঞ্জিলে।
প্রাতঃকালে গৃহের সমস্হ কাজ ফেলে তমা তরুনের খোঁজে বের হয়। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতেই সে অনেক মানুষের ভীড় দেখতে পায়। সবাই কে পাশকাটিয়ে সামনেএগিয়ে যাওয়ামাত্রই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চাদরে মোড়ানো নিথর একটা মনুষ্য দেহ।
পাশেই পরে ছিল প্রাণ হীন শুকনো একগুচ্ছ কদম ফুল।
হায়রে বাদলওদিনেরও প্রথমও কদমও ফুল -_——————
বৃষ্টির ছোঁয়া পেলেও
কেন সে আজ উষ্কখুষ্ক মৃত প্রায়।
মনের অজান্তেই দুফোঁটা অশ্রু তমার নেত্রথেকে কদম গুচ্ছে পতিত হতে থাকে, কদম পুষ্প গুলোকে বরষার পরশে সতেজতায় পূর্ণ জীবিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়।
লেখক মো : শাহ জালাল