Homeগল্পপ্রায়শ্চিত্ত

প্রায়শ্চিত্ত

    জেবুন্নেছা জেবু

বিনু কে কায়দা করে হত্যা করা আর খুব তড়িঘড়ি করে গ্রামের বাড়িতে দাফন করার পর মকবুল একটু হালকা অনুভব করে । ভাবছে কেউ জানলোই না , গোপনে গোপনেই সেরে গেলো আর সমাজে ইজ্জতটা বেচেঁ গেলো।
গৃহকত্রী ফারিয়া কলেজের প্রফেসর আর স্বামী মকবুল সাহেব স্বনামধন্য ডাক্তার । অতি ভাল মানুষ বলেই পরিচিত সমাজে প্রচুর নাম ডাক । কিনতু কে জানতো অন্দর মহলে এ মকবুলের মতো জঘন্য চরিত্র খারাপ নীচ স্বার্থপর আর একটা ও নেই ।
সে চেম্বারে যেতো সন্ধ্যায় আর সপ্তাহে চারদিন সরকারি মেডিকেল কলেজে এ ক্লাস নিতো ।
ফারিয়া না থাকা অবস্থায় বলতো বিনু আমার রুমে আয় এ সময় তুই একা বলেই তো আমি তোকে ডাকি , বূঝোস না? বিনু পনের বছর বয়সী অসহায় গরীবের মেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বাবার বয়সী লোকের মুখে এমন কথা শুনে বিব্রত হয় বিনু ।
কাছে ডাকলে স্বইচ্ছেতে বিনু আসতো না , বলতো আমি আপনেরে বড় ভাই বলেই জানি , মকবুল বলতো আমি তোরে আদর করবো আয় বলেই নিজেই জোর করে কাছে নিতো আর এভাবেই দিনের পর দিন বিনুকে ধর্ষণ করতো । বিনুকে বলতো এসব কথা কাউকে বলবি না খবরদার ,বল্লে তোর পরিবার না খেয়ে মরবে , তোর ও তোর পরিবারের সারাজীবনের দায়িত্ব আমি নিলাম …
মকবুল বিনুকে বলে শোন…. আমি তোকে ভালোবাসি তোর পরিবারের জন্যে চাল , ডাল সব কিছুর জন্যে তোর বাবা ও মাকে মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি শুধু তোর জন্যে । তোর ম্যাডাম জানতে পারলে তোরই ক্ষতি হবে । বিনু অতো কিছু বুঝতো না ভাবতো তার পরিবার সুখে আছে এ মানুষটার জন্যেই , ভালো মানুষ হিসেবে মকবুল সাহেবকেই মানতো । অথচ কে জানতো…. ওর শিরা উপশিরায় নস্টামি আর গরীব মেয়েদের শরীর ভোগের পর সিগারেটের মতো পুড়িয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে ওর মন কাঁপে না ।
গরীবদের অনুভূতি নিয়ে খেলা আর সব কিছুই টাকা দিয়ে ইচ্ছে মতো সাজানো ধনী মকবুল এর কাছে ছিলো বিনোদন।
সহজ সরল বিনু কিছুই বুঝতো না, এক সময় সে প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে ।
কোন রকমের সিনড্রোম ছাড়া বিনূর পেট উঁচু হতে লাগলো । ফারিয়া একদিন মকবুলকে বলে জানো আমার বিনু মেয়েটির হাবভাব ভালো লাগছে না ।
মকবুল :- কেনো কি হয়েছে ?
ফারিয়া :- তুমি কি কিছুই বুঝতে পারছো না …
মকবুল :- হ্যা আমরা তো খালি বাসা রেখেই চলে যাই , আমাদের দুই বছরের মেয়ে টাকে ওর কাছেই রেখে যাই , বিশ্বাস তো করতে হবে । না জানি কোন ছেলের সাথে কি করে বসে , আজকাল যুগ ভালো না । আমি ও কয়েকদিন ধরে দেখছি সেটা …..
ফারিয়া :- বিনু বিনু করে ডাক দেয় ….
বিনু আসলেই ফারিয়া বলে শোন বিনু আমরা না থাকা অবস্থায় দারোয়ান বা অন্যে কেউ যেনো আমার বাসায় না আসে ।
বিনু :- না ম্যাডাম কেউ আসে না ।
এরপর আরো দুই মাস কেটে গেলো , এবার স্পষ্টই লক্ষ্য করে বিনুর শরীর ।
ফারিয়া খুবই বিশ্বাস করে তার স্বামী মকবুলকে, এতো বিশ্বাস করে মকবুলকে এ যুগের ফেরেশতা মনে করে ।
সেদিন বিনুর মা আসে আর খেয়াল করে বিণূর এ অবস্থা । ওরা দুইজন কলেজে চলে গেলে বিণূর মা বিনু কে জিজ্ঞেস করে বল কে করেছে এ দশা । আমি তো তরে ইজ্জত বিক্রি করার জন্যে দেই নাই , আমরা গরীব কিনতু গরীবের ও ইজ্জত আছে । বল সত্য বল …এ বলেই চিৎকার কান্না কাটি আর বিনুকে চড় থাপ্পড় দিলে বিনু সব খুলে বলে । মাকে জানায় এসব ছয় মাস ধরে চলছে ।

বিণূর মা অপেক্ষা করে কবে ম্যাডাম আসবে, কলিং বেল চাপতেই দৌড় দেয় , দেখলো ম্যাডাম আসছে ….

আমাকে একটু চা দেয় ভাল করে এ বলেই সোফাতে বসে ফারিয়া ….
আরে বিণূর মা ! কেমন আছো ? বিণূর মা চা এগিয়ে দিলো সাথে নাস্তা নিয়ে ….কি যেনো বলতে চায়…
আবার ফারিয়া বল্লো কি ব্যাপার বিনুর মা কেমন আছো ? অনেক দিন পর বিনু কে দেখতে আসছো ।
বিণূর মা আমতা আমতা করে বল্লো….একটা কথা কইবো যদি সাহস দেন ….
হ্যা বলো বিণূর মা ।
ম্যাডাম আমরা গরীব মানুষ আপনাদের দয়াতে খাই পরি কিনতু আমাদের একটা ইজ্জত আছে , স্যার কেমনে আমার বিণূর এত্তো বড় সর্বনাশটা করলো ! আপনারে ও আল্লায় মেয়ে দিছে এ বলেই কান্না …..
ফারিয়া ভাবতেই পারেনি এরকম একটা কথা বিণূর মায়ের মুখে শুনবে…
ফারিয়া বলছে কি হয়েছে ?
বিণূর মা বিণুকে সামনে এনে বলে কি করছে দেখেন ভাল কইরা ….ওকে পোয়াতি করছে স্যার ….
ফারিয়া চিৎকার করে বলে কি সব বলছো বিণূর মা ! কার সম্পর্কে বলছো ? ফেরেশতার মতো মানুষ এর নামে অপবাদ দিচ্ছো ! তোমার মেয়ে কার সাথে নস্টামি করে এখন এসব জঘন্য মিথ্যা বলছে ।
বিনুকে ফারিয়া বল্লো শুন বিনু তোকে আমি ভাল বলেই জানি, সত্যিটা বল ……বিনু চট করে মাথায় কোরান নিয়ে কেঁদে বলে সত্যে ম্যাডাম কোন মিছা কথা আমি কই নাই ।

              ফারিয়া  নিজেকেই  বিশ্বাস  করতে  পারছিলো  না ......

সে বল্লো বিণূর মা ও বিনু শোন , আজ এসব নিয়ে কোন কথা আর বলবা না । আমি কাল জানাবো সত্যে মিথ্যা যাচাই করবো তারপর কি করা যায় দেখি ।
মকবুল এসেই আজ সোজা বেড রুমে গিয়ে মেয়েকে আদর করছিলো , এ দৃশ্য দেখে ফারিয়া ভাবলো এমন মানুষ কি করে এ কাজ করবে ? আচ্ছা সরাসরি জিজ্ঞেস করি ….
ফারিয়া :- আচ্ছা মকবুল বিনু মেয়েটি কেমন?
মকবুল :- শুনো আমি অনেক দিন ধরে তোমাকে কথাটা বলবো ভাবছি ,…
ফারিয়া :- কি কথা !
মকবুল :- গরীব মানুষদের বিশ্বাস করো না , ওদের লোভ বেশী , লোভে ওরা যে কোন কিছুই বলতে বা করতে পারে । একদিন আমি বিনু মেয়েটিকে দারোয়ান এর সাথে দেখেছি । বিশ্বাস না হয় কাল দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করো বিনুকে বিয়ের জন্যে রাজী কিনা !
এবার ফারিয়া মকবুলের কথার ফাঁদে পড়ে ভাবনা পরিবর্তন হয়ে যায়।
মকবুল :- দারোয়ান কে ডেকে বলে এ নেয় বিশ হাজার টাকা, আগামী কাল আমার ঘরের কাজের মেয়েটিকে একসপ্তাহের জন্যে বিয়ে করবি । তারপর বাকি টা আমি দেখবো ।
দারোয়ান রহিম মিঞা বল্লো স্যার আমার তো বউ বাচ্চা আছে ।
মকবুল :-চুপ ! তোকে টাকাটা কেনো দিয়েছি ?
রহিম মিঞা :- ঘাড় নেড়ে হ্যা সম্মতি জানায়..
সময় মতো রহিম মিঞা কে ফারিয়া ডাকলো আর জিজ্ঞেস করলো রহিম মিঞা তুমি কি বিনু কে বিয়ে করবা ?
রহিম :- ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে আমারে মাফ করেন , আমি হেরে বিয়া করুম ।
এদিকে মকবুল হুজুর আর দুই জন প্রতিবেশী ও কাজী ডেকে নিয়ে আসলো । বিয়ে পড়ানো হলো আর বিনুর চোখের পানি নীরবে নিভৃতে ঝরতে লাগলো ।
বুঝে গেলো পৃথিবীতে টাকার কাছে সব কিছুই হার মানে । সত্যে কেউ না জানুক মহান আল্লাহ সৃষ্টি কর্তা তো জানেন ।
সেদিন রাতে বিণূর মাকে মকবুল বল্লো তোমার মেয়ে একটা চরিত্রহীন , বিয়ের আগেই দারোয়ানের সাথে নস্টামি করেছে । ভাগ্যে ভালো আমার মতো একজনের কাছে ছিলো না হয় ভাবো কি হতো !
কথা গুলো শুনেই বিনু অবাক হয়ে যায় আর মুখে কাপড় দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়।
বিণূর মা ও বিনুকে ভুল বুঝলো ,ঘৃণ্য ভাবে তাকিয়ে বিনুকে ভৎসনা করে বল্লো ছি : তুই স্যার এর মতো মহৎ মানুষের নামে এমন খারাপ কথা বলতে পারলি !
দুই দিন পর বিণূর মাকে একটা ঔষধ এনে দেয় মকবুল আর পাচঁ হাজার টাকা দিয়ে বলে বিণূর শরীর ভাল নয় টেক্সি ঠিক করে দেবো , তুমি ওকে নিয়ে বাড়ি চলে যাও আর সবার কাছে বলবে ওর বিয়ে হয়েছে দারোয়ানের সাথে । আর এ ঔষুধটা ওর জন্যে , খেলে নরমাল ডেলিভারী হবে পনের দিন পর খেতে হবে । প্রতিদিনই খালি পেটে দুই চামচ করে দিবা ।

এটা একটা ভিটামিন সিরাপ বলেই বিণূর মা এর হাতে তুলে দেয় , আর বল্লো ভেবো না যা হবার হয়েছে ছোট মানুষ হয় তো বুঝে নাই । ওরে আর গাল মন্দ করি ও না বিণূর মা । প্রতি মাসে মাসে বেতনটা আমি বিকাশ করে দেবো বল্লো মকবুল সাহেব , আমারতো একটা দায়িত্ব আছে । বিনুকে মেয়ের মতোই স্নেহ করি ।
বিণূর মা কেঁদে বল্লো বিণূর হয়ে আমি মাফ চাই গো স্যার । আপনি অনেক ভাল মানুষ ।

মকবুল বল্লো বিনু ছোট মানুষ ভুল করেছে , যাও বিনুকে নিয়া কালই দেশের বাড়ি চলে যাও…..পরের দিন টেক্সি ঠিক করে দিলো আর বিনুর মাকে বল্লো বিণূর স্বামী মাসে মাসে গিয়ে দেখে আসবে ।

বাড়িতে আসার পর বিনু শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে, কারো সাথে কোন কথা বলে না , খায় না । ভাবছে কি জঘন্য মিথ্যা বলে তার সাথে মকবুল সাহেব এমন টা করলো , এমনই ভাবে সাজালো স্বয়ং তার মা তাকে বিশ্বাস করছে না ।
কিভাবে সে এ মিথ্যা অপবাদ হতে মুক্তি পাবে সে চিন্তাটা তার মনকে ব্যাথিত করে বার বার ।

বিনুরা চার বোন , ভাই নেই ।বিনু তৃতীয় শ্রেণীর পর আর পড়েনি ….মোটামুটি লিখতে পড়তে পারতো । পনের দিন পর ওর মা মকবুল এর ঔষধ টা খেতে দেয় প্রতিদিনই সকাল খালি পেটে দুই চামচ করে ….আর ধীরে ধীরে তার শরীর খারাপ হতে থাকে আট মাসের মাথায় বিনু হটাৎ বমি শুরু করে শেষ রাতে বিণূর মেজো বোন শীলা পানি খেতে দিলে বিনু তীব্র ক্স্ট অনুভব করে আর রক্ত বমি করে ….বলে, মা গো আমি মরে যাচ্ছি ,মকবুল সাবের কথা তুমি বিশ্বাস কইরো না সে ডাক্তার নামের পশু, সে আমারে মেরে ফেললো মা । আমি মিথ্যা বলিনি …আমি অভিশাপ দিয়া গেলাম , আমি চরিত্রহীন না মা , আমি নিজে কিছুই করিনি সেই সব করছে ….একথা ছিলো বিণূর শেষ কথা …..
বিণূর মা আর বোন চিৎকার করে কাঁদে বলে , পাগল মাইয়া একটু সুখ পাবি বইলা তরে কামে দিছিলাম …. কে জানতো তোর লগে এমন হইবো । বিণূর বোন ফারিয়া কে ফোন দেয় বলে ম্যাডাম …. গো আমার বইন বিনু মইরা গেছে ।
মকবুল সাহেব সকালেই গাড়ী বের করে ফারিয়া কে নিয়ে বিণূর গ্রামে গেলো । কেঁদে কেটে অস্থির করে তুললো পরিবেশ টা …..আমি তারে নিজের মেয়ের মতো জানতাম, বিয়ে দিলাম এমন ভাল মেয়ে আর হয় না । সবার সামনে আবার খুবই ভাল মানুষের উপমা নিতেই বিণূর পরিবার কে সব সময় দেখে রাখবে বলে ।

             বিনু কে  কায়দা  করে হত্যা করা আর  খুব তড়িঘড়ি করে গ্রামের  বাড়িতে  দাফন  করার পর মকবুল সাহেব  একটু  হালকা অনুভব  করে ।ভাবলো  সব  সমস্যা মিটে  গেলো ।

মানুষ নিজেদের অপরাধ গুলো কার জমিনে দাঁড়িয়ে করছে ভুলে যায়…বেমালুম ভুলে যায় –স্রষ্টা উপর হতে সব দেখছেন । পৃথিবী জুড়ে এত্তো দাপাদাপি অথচ নিজের চোখ দিয়ে আয়না ছাড়া নিজেরই চেহারাটা দেখার ক্ষমতা লোকের নেই কিনতু কারণে অকারণে নিজেদের শ্রেষ্টত্ব দেখাতেই কতো না কৌশল অবলম্বন করে ।

বোকা মকবুল ও সেই অহমিকায় আজ অন্ধ ।
বছর ঘূরে নতুন বছর আসে ফারিয়া আবার মা হবে । ড্রেসিং টেবিলে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো আর ভাবছিলো মকবুলের মতো স্বামী পেয়ে সে ধন্য ।
পেছন হতে মকবুল ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে ফারিয়া একটা কাজ করো তোমাদের গ্রামের বাড়ি হতে তোমার জন্যে একটা কাজের জন্যে মেয়ে নিয়ে আসো , এমনিতে তোমার অনেক ক্স্ট হয়, আর একটা রুম তো পড়েই আছে ।
ফারিয়া :-তা ঠিক সামনে তো লাগবে ই …..
এদিকে বিণূর ছোট বোন শিলার বার বার বিণূর শেষ কথাটা মনে পড়ছিলো । আজ গরীব বলে আমার বোনকে মরতে হলো কিনতু আসলেই কি ঘটেছিলো বিণূর সাথে , তা জানতে ইচ্ছে হয় শীলার । শীলা খুবই বুদ্ধিমতি আর বিণূর চেয়ে সুন্দরী , এবার এস এস সি পরীক্ষা দেবে । মকবুল যাবার সময় বলে ভাল মতো পড়ো , নার্সিং এ ভর্তি করিয়ে দেবো তোমাকে। যা খরচ লাগে আমি দেবো ।
মকবুলের এমন ভাল মানসিকতা দেখে বিণূর পরিবার তো বটে ই , গরীবদের প্রতি দানশীলতা ও মহত্ব ফারিয়ার ও খুবই ভাল লাগতো । ফারিয়া কখনো ভাবতে ও পারে না মকবুল এর আসল চরিত্রটা কি ।
মকবুল মেডিকেলে ও সূযোগ মতো পেলে অসহায় নার্সদের ভোগ করে । নারী লোভী এ ডাক্তার জনসেবা তো দূরে বরং মেয়েদের জীবন নিয়েই খেলতে তার আনন্দ । অথচ স্ত্রী ফারিয়ার সামনে সবচেয়ে ব্যস্ততা আর ভাল মানুষের অভিনয়টা ভাল মতন চালিয়ে যায়।

  ফারিয়া  সেদিন  বলছিলো  বিণূর ছোট  বোনের  কথা তখনই মকবুল  বল্লো শীলা  তো  এস  এস সি  দিচ্ছে  এবার  তার  ছোট টাকে নিয়ে  আসো  কিছুদিনের জন্যে ।

মাসে মাসে টাকা দিচ্ছে বলেই বিণূর পরিবার মকবুল এর কথা শুনতো । বিণূর বাবার বয়স হয়েছে আগের মতো রিক্সা চালাতে পারে না ।
ফারিয়া মানুষ হিসেবে খুবই মায়াবী মহৎ ছিলো , বিণূর পরিবারের প্রতি তার আন্তরিকতা ছিলো ।
শীলা মেয়েটি ভীষন বুদ্ধিমতী ছিলো । তার সন্দেহ হচ্ছিলো মকবুলের আচরণ ও বিনুর বলা শেষ কথা গুলো । মনে মনে সে চাইছে মকবুল সাহেবের ঘরে যাবার আর সব রহস্য বের করার , এদিকে একমাস বাদে পরীক্ষা শেষ হয় এর পর ফারিয়ার ফোন আসে ।

শীলা :- হ্যালো ? আসলামুআলাইকুম….
ফারিয়া :-শীলা তোমার মাকে বলো আমি একটু কথা বলবো …
শীলা মাকে ফোন হাতে দিয়ে পাশেই আছে …
ফারিয়া বল্লো বিণূর মা,
আমি জানি.. বিণূর জন্যে তোমার মন এখনও খারাপ , এবার আমি চোখে চোখে রাখবো তোমার মেয়ে শীলা কে , তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস রেখো । শীলার পরীক্ষা শেষ সে আমার কাছে চলে আসুক এখানে পড়াশুনা করবে আমার সহযোগী ও হবে।পরে ওকে নার্সিং এ ভর্তি করিয়ে দেবো । বিণূর মা বল্লো এটা শীলার সাথে কথা বলে ঠিক করুন । আমি অশিক্ষিত মানুষ কি বুঝবো?
শীলা ফোন নিয়ে বল্লো আপু আমি আসবো ।
ফারিয়া খুবই চিন্তিত ছিলো , বিণূর মৃত্যুর পর মেয়ে আর দেবে কিনা কারণ আজকাল বিশ্বস্ত মানুষ পাওয়া সহজ কথা নয় । শীলা আশ্বস্ত করায় শান্তি লাগছে ।
শীলার পরীক্ষা শেষ খুবই মেধাবী শীলা এসেই কয়েক মাসেই মন জয় করে নিলো ফারিয়ার ।
রূপে গুণে কাজে চমৎকার দক্ষতা সর্ব গুণে গুণান্বিত শীলা….। মকবুল সাহেব ও ফারিয়াকে বিচক্ষণতার সাথে শীলা লক্ষ্য করে উপলব্ধি করলো ফারিয়া মকবুল সাহেবের অন্ধ ভক্ত ও ভালো মহিলা ।

ফারিয়ার ব্যবহার খুবই ভালো আর কাজের মেয়ে হিসেবে শীলার সাথে ব্যবহার করে না , বরং উলটো বলে কাজের লোক ছাড়া আমরা যারা চলতেই পারি না তারা কেনো বুঝতে চাযই না , কাজের জন্যে আসা ছোট্ট মেয়েটি বা মানুষটা অভাবের কারণেই কাজ করে । তাদের খাবার ও আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়াতে যদি তা না পারে তাহলে লোক রেখে অত্যাচার করার কোন অর্থ হয় না । মকবুল সাহেব ও তার কথায় সায় মিলায় কিনতু শীলার সন্দেহ হয় মকবুল এর আচরণে।
কারণে অকারণে মকবুল এটা সেটা না পাবার বাহানাতে শীলাকে ডাকে আর তার দৃষ্টি ভঙ্গি যে খারাপ সেটা বুঝতে বাকি নেই শীলার ।
তারপর ও না বুঝার বাহানাতে মকবুল এর অনুপস্থিতিতে শীলা ফারিয়াকে বলে ভাবী একটা কথা বলি রাখবেন ?
ফারিয়া বল্লো রাখবো না মানে অবশ্যই রাখা হবে ।
আপনি একদিন কলেজে যাবেন না চুপ করে লুকিয়ে থাকবেন একটা জিনিস দেখাবো আপনাকে ।
ফারিয়া —আমি তো কিছুই বুঝছি না, কি দেখাবি ? আপনারা চলে গেলে আপনার খুবই একজন আপন জন বাসায় আসে আমার সাথে কুকর্ম করতে চায় , আমি বার বার এড়িয়ে গেছি এখন মনে হয় আর পার পাবো না ।
ফারিয়া বল্লো কই সিসি ক্যামরায় তো বাহিরের লোক কেউ বাসায় আসতে দেখি না ।
কি সব বলছিস ?
শীলা –ভাবী দয়াকরে একটা দিন থাকুন, দেখবেন সব । ঠিক আছে আমি কোথায় লুকাবো বল?
আপনি আর স্যার একসাথেই বাহিরে যাবেন বেবীকে আপনাদের বাসায় রেখে আসবেন আর পরক্ষনে আপনি চলে আসবেন আর আপনি খাটের নীচে থাকবেন। কোন অবস্থায় আমি না ডাকলে বের হবেন না ….
ঠিক আছে ….
শীলা বল্লো আপনি শুধুই শুনবেন আর দেখবেন সব …
ঠিক আছে তাই হবে ।
সময় মতো ফারিয়া চলে আসে কিছুক্ষণ পর কলিংবেল শুনেই কথা মতো ফারিয়া খাটের নীচে অপেক্ষায় আছে ….
শীলা দরজা খুলতেই মকবুল বল্লো –
শীলা আমার জন্যে ফ্রিজ হতে একগ্লাস জুস নিয়ে রুমে আয় ।

শীলা জুস নিয়ে আসে মকবুল জুস শেষ করেই পরনের শার্ট খুলে শীলা শীলা করে ডাকে , শীলা আসলে
বল্লো কাছে আয় আমার সাথে কোন রকমের বাড়াবাড়ি করবি না ।
নয়তো জোর করবো , ঘরে কেউ নেই তুই আর আমি । সব পাবি যা যা লাগে সব পাবি । শীলা বল্লো আমাকে মাফ করুণ —
আমার বোন মৃত্যুর আগে বলেছে আপনি ওকে নষ্ট করে গর্ভবতী করেছেন আর আমার মাকে দিয়ে ভিটামিন নামে ঔষধ দিয়ে হত্যা করেছেন ।
মকবুল —হাহা হা কি প্রমাণ আছে ?তোদের মতো সামান্য দুই টাকার মেয়ে আমার কি করবি ?
কতো নার্স আমার পায়ের কাছে গড়াগড়ি দেয় জানিস ?
শীলা –হ্যা আমরা সামান্য দুই টাকার মেয়ে কিনতু মেয়ে জাতি , মা জাতির সাথে অন্যায় আল্লাহ সহ্য করেন না । এতো কথা বলিস না সব ভুলে যা….
ধীরে ধীরে মকবুল শীলার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে , শীলা পেছনের দিকে যেতে থাকে আর উচ্চ স্বরে বলতে থাকে ভদ্রতার আড়ালে আপনি খুনী আপনি চরিত্রহীন …

                ফারিয়া খাটের  নীচ হতে সব শুনছিলো আর  নিঃশব্দে বেরিয়ে  পাশে পড়ে থাকা  কাঠের ফুলের টব  দিয়ে মাথায় আঘাত করে আর  সাথে সাথে মকবুল মাটিতেই লুটিয়ে পড়ে ।

মকবুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফারিয়ার দিকে ….
ফারিয়া থানায় ফোন করে সব জানায় ,পুলিশ হাত কড়া দিয়ে মকবুলকে নিয়ে যাবার সময় ফারিয়া বল্লো—
সমুদ্র যেমন সব কিছুই তরঙ্গের মাধ্যমে পাড়ে তুলে দেয় তেমনই লোকের অপকর্ম সীমা লঙ্ঘন হলেই তার শাস্তি অনিবার্য পায় স্রষ্টা কতৃক , সব কর্মের ফল নিশ্চিত আগে পরে এ জগতেই হয়…..

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

এই লেখকের আরো লেখা

বৈশাখ

সম্পদ

এই ক্যাটাগরির সর্বাধিক পঠিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য